সর্বশেষ

'লিম্যানে রাশিয়ার ব্যর্থতা', ইউক্রেন যুদ্ধ কোন পথে?

প্রকাশ :


/ সোভিয়েত আমলের ট্যাংক নিয়ে ইউক্রেনীয় সেনারা / ছবি: এপি

২৪খবরবিডি: 'যে রুশ জেনারেল পূর্ব ইউক্রেনের একটি কৌশলগত শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন 'লজ্জা ঢাকার' জন্য তার উচিত রণক্ষেত্রে রক্ত ঝরানো।এভাবেই ইউক্রেনের লিম্যান শহর থেকে রুশ সেনাদের প্রত্যাহারের পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর মিত্র ও চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ। ডনেস্কের লিম্যান শহরের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে ছিলেন আলেক্সান্ডার লাপিন নামের রুশ কর্নেল। গত সপ্তাহে শহর থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন।'
 

'কাদিরভ বলেছেন, লিম্যান থেকে সেনা প্রত্যাহারের আগে কর্নেল লাপিন তার ঘাঁটি সরিয়ে নিয়েছেন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের শক্ত ঘাঁটি লুহানস্কে। যা লিম্যান থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। লাপিনের বিরুদ্ধে গোলাবারুদ ও যোগাযোগের সরঞ্জামের সরবরাহ নিশ্চিত এবং রণক্ষেত্রের সেনাদের সঙ্গে সমন্বয় করতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন চেচেন নেতা। শনিবার টেলিগ্রামে কাদিরভ বলেছেন, আমি হলে লাপিনকে একজন পদাতিক সেনা হিসেবে পদাবনতি করতাম। তার ব্যাজ কেড়ে নিতাম। একটি অ্যাসল্ট রাইফেল হাতে ধরিয়ে দিয়ে রণক্ষেত্রের সম্মুখসারিতে পাঠাতাম। যাতে করে তিনি রক্ত দিয়ে লজ্জা ঢাকতে পারেন। 'ভালো অবস্থানে' বাহিনী মোতায়েন করতে লিম্যান থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।ইউক্রেনীয় সেনাদের পাল্টা আক্রমণের মুখে লিম্যান থেকে রুশ সেনাদের পিছু হটার ঘটনাটি আরও বেশি অপমানজনক হয়ে ওঠেছে বিশেষ করে শুক্রবার পুতিন ডনেস্কসহ ইউক্রেনের চারটি ভূখণ্ডকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে ঘোষণা করার কারণে। লিম্যানে ইউক্রেনের সাফল্য অঞ্চলটিতে তাদের সেনাবাহিনীকে আরও অগ্রসর হওয়ার সুযোগ করে দেবে।'

 



/ রাশিয়ার একটি সামরিক যান ধ্বংস করছেন ইউক্রেনীয় সেনারা / ছবি: রয়টার্স

 

''ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধ পর্যালোচনাকারীরা বলছেন, লিম্যান থেকে পিছু হটা রুশ সামরিক ব্যবস্থার ব্যর্থতার প্রতিফলন। যারা এখনও সোভিয়েত আমলের কৌশল অবলম্বন করে যুদ্ধ পরিচালনা করছে। কিয়েভভিত্তিক বিশ্লেষক ইহার তিশকেভিচ বলেন, বদলানো সময় হয়েছে, কিন্তু রুশ সেনাবাহিনী পাল্টায়নি। এটাই আসল কারণ। ১৯৭০ সালে লিখিত সামরিক নির্দেশনা যখন বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয় তখন আজ হোক বা কাল খারকিভ ও লিম্যানে যা ঘটেছে তা-ই ঘটবে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, লিম্যান পুনরুদ্ধারের ফলে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ডনেস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের সমন্বয়ে গঠিত ডনবাস মুক্ত করার পথে অগ্রসর হবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। এক সামরিক বিশ্লেষক বলেছেন, ইউক্রেন একটি মহাসড়ক পুনরুদ্ধার করেছে। যে মহাসড়ক হলো ডনেস্ক ও লুহানস্কতে রুশ সেনাবাহিনীর রসদ সরবরাহের দ্রুততম পথ। জার্মানির ব্রেমেন ইউনিভার্সিটির রুশ বিশেষজ্ঞ নিকোলায় মিত্রোখিন বলছেন, ইউক্রেন এখন লুহানস্কের উত্তরাঞ্চল মুক্ত করতে অগ্রসর হতে পারবে। যার মধ্য দিয়ে কয়েক মাস আগে অর্জিত সামরিক সাফল্য হাতছাড়া হবে রাশিয়ার। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের আগেই ডনবাস সীমান্তের রণক্ষেত্রে পৌঁছাতে পারে তারা।'


'একই সময়ে রাশিয়ায় সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে আসছে। যা এতদিন ছিল বিরল। রুশ কর্মকর্তা ও যুদ্ধের খবর সংগ্রহকারী সাংবাদিকেরা রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী শের্গেই শোইগুসহ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সমালোচনা করছেন। শোইগুকে পুতিনের সম্ভাব্য উত্তরসূরী হিসেবে মনে করা হয়। 'পুতিনের চিফ' হিসেবে পরিচিত রুশ ধনকুবের ইয়েগভেনি প্রিগোজিন হলেন এমন সমালোচকদের একজন।

'লিম্যানে রাশিয়ার ব্যর্থতা',  ইউক্রেন যুদ্ধ কোন পথে?

ওয়াগনার ভাড়াটে যোদ্ধা গোষ্ঠী তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন। রাশিয়ার কারাগার থেকে বাহিনীটির যোদ্ধা সংগ্রহের জন্য একাধিক শহর নিজেই পরিভ্রমণ করেছেন। বিরল এক মন্তব্যে তিনি রুশ কর্নেল লাপিনের সমালোচনা করার রমজান কাদিরভের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, কাদিরভের মন্তব্যের ধরণ আমার সঙ্গে যায় না। কিন্তু আমি বলতে পারি, সুদর্শন শয়তান রমজান এগিয়ে যান।'
 

'দক্ষিণ সাইবেরিয়ার এক আইনপ্রণেতা বলেছেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ১৫ লাখ উর্দি হারিয়ে ফেলেছে। ফলে বাহিনীতে নতুন যোগ দেওয়া সদস্যদের আসন্ন শীতে পরিধানের মতো কোনও পোশাক নেই। জাবাইকালস্কি অঞ্চলের আন্দ্রেই গুরুলেভ বলেন, সবকিছুই ছিল সেখানে। হুট করে তা হাওয়া হয়ে গেছে। কোথায় গেছে বা কীভাবে গেলো তা কেউ বলতে পারে না। দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা এই সাবেক জেনারেল বলছেন, রুশ সেনাদের পুরোপুরি প্রতিরক্ষা ত্যাগ করা উচিত হয়নি। তাদের উচিত ছিল অন্তত আগামী দুই মাস নতুন সেনারা রণক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত মাটি কামড়ে থাকা। বর্তমান রুশ সামরিক কাঠামোরও সমালোচনা করেছেন তিনি। বলেছেন, দুর্ভাগ্যবশত, এখনকার ব্যবস্থা ব্যর্থ হচ্ছে। রুশ সাংবাদিক আলেক্সান্ডার কটস বর্তমান পরিস্থিতিতে ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারির বিপ্লবের সঙ্গে তুলনা করছেন। ওই সময় দ্বিতীয় জার নিকোলাসকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। যা সমাজতন্ত্রীদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করে। কমসমোলস্কায়া প্রাভদার এই রিপোর্টার সোমবার টেলিগ্রামে লিখেছেন, দ্বিধা, হতাশা ও দেশে শত্রু খোঁজার কারণে যুদ্ধের মানসিকতা হারিয়েছিল রুশ সাম্রাজ্য। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ১০০ বছর পরও কি আমাদের প্রয়োজন? বিশ্লেষকরা তার সঙ্গে একমত পোষণ করছেন। ব্রেমেন ইউনিভার্সিটির মিত্রোখিন বলছেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয়ের সময় রুশ সেনাদের যে মানসিকতা ছিল, এখন ঠিক সেটিই দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, শীর্ষ পর্যায়ে অসন্তোষ, সরাসরি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ, কমান্ডারদের ওপর মৌখিক আক্রমণ– এগুলো হলো প্রাথমিক পর্যায়। এর পরের ধাপ হলো কমান্ডার -ইন-চিফের ওপর অনাস্থা, যিনি কোনও পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারছেন না। তৃতীয় পর্যায় হলো বিপ্লবের কারণ পর্দার আড়ালে তারা ইতোমধ্যে যুদ্ধ হেরে গেছে।'

 


/সড়কের পাশে পড়ে থাকা রাশিয়ার বিধ্বস্ত ট্যাংক / ছবি: রয়টার্স

 

'নির্বাসনে থাকা এক পুতিনবিরোধী নেতা বলছেন, শিগগিরই পুতিনের সমালোচনা শুরু হতে পারে। গেন্নাদি গুডকভ বলেন, এই লড়াই শুরুর জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে সময় এসেছে। এখন পর্যন্ত পুতিনবিরোধী কোনও বক্তব্য আসেনি, কিন্তু আসতে খুব বেশি দেরি হবে না। প্রথম ঢিল ছোড়া হয়ে গেছে, তা পুতিনকে লক্ষ্য করে নয়, তার ঘনিষ্ঠজনকে লক্ষ্য করে।'
 

'তিনি ধারণা করছেন ইউক্রেনে লড়াইরত কয়েকজন জেনারেলও সমালোচনায় মুখ খুলতে পারে। তার মতে, এখন পর্যন্ত কাদিরভ, প্রিগোজিন সমালোচনা করেছেন। কিন্তু শিগিগিরই অনেকে সামনে আসবেন যাদেরকে বলির পাঁঠা বানানো হবে। ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি ১৯০৫ সালের রুশো-জাপানি যুদ্ধের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করছেন। ওই সময় রুশ সেনারা বিপর্যয়কর পরাজয়ের মুখে পড়েছিল। গুডকভ বলেন, জাপানকে দুর্বল প্রতিপক্ষ, দুর্বল শত্রু হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। যুদ্ধটি হওয়ার কথা ছিল মানুষের আস্থা ফেরানোর উপায়, সাম্রাজ্যের ম্রিয়মাণ শক্তি পুনরুদ্ধারের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ১৯০৫ সালের রুশ বিপ্লবের পথে নিয়ে যায়। যে পথ ধরে ১৯১৭ সালে বিপ্লব হয়। তিনি বলেন, আমরা সবাই জানি এগুলোর পরিণতি কী হয়েছিল।'-সূত্র: আল জাজিরা'

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত